নওগাঁর নিয়ামতপুরের নেহেন্দা (রামাপাড়া) গ্রাম দীর্ঘ ২৭ বছরেও বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত আছে। নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটিার দুরে অবস্থিত নেহেন্দা রামাপাড়া গ্রামটি। এই গ্রামে প্রায় ২শ পরিবার বসবাস করে। প্রতিটি পরিবারে গড়ে ৫জন করে লোকসংখ্যা রয়েছে। মোট গ্রামের লোক সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। গ্রামের শতভাগ বাসবাসাকারী সোনাতন ধর্মাবালম্বী এবং দিনমজুর। বিদ্যুতের জন্য গ্রামের অধিবাসীরা সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান এমনকি স্থানীয় নেতাদের বাড়ী বাড়ী ধর্না দিয়েও কোন কাজ হয়নি। নিরুপায় হয়ে গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবার সোলার বিদ্যুত ব্যবহার করে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা পুরণ করতো। বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চড়া দামে কিস্তিতে সেই সমস্ত সোলার নিলেও কিস্তির টাকা পরিশোধ হতে না হতেই সোলারগুলো প্রায় অকেজো হতে চলেছে। চাটু, রবীন্দ্রনাথ, উজ্জ্বল তাদের বাড়ীতে সোলার ব্যবহার হতো। এক বছর যেতে না যেতেই সোলার অকেজো হতে চলেছে। এক কথায় বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তারা দুধের স্বাধ ঘোলে মিটাচ্ছে। গ্রামে বিদ্যুত না থাকায় কমলমতি ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা ঠিকভাবে করতে পারছে না। একটি এলাকার উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে রাস্তা তারপরেই বিদ্যুৎ। অথচ সেই বিদ্যুৎ থেকে নেহেন্দা রামাপাড়ার ১ হাজার মানুষ ২৭ বছর থেকে বঞ্চিত। নির্বাচন আসলে প্রত্যেক দলের নেতারাই প্রতিশ্র“তি দেন এবার বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। গত ২৩ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে সরকার দলীয় নেতারা ভোট প্রার্থনা করার সময় ওয়াদা করেছিল জুন/১৬ মাসের মধ্যে নেহেন্দা রামাপাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ উদ্বোধন করা হবে। বিনিময়ে একটি করে নৌকায় ভোট দিবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উদ্বোধন তো দূরের কথা আরো ১০ মাস অতিবাহিত হলেও বিদ্যুতের খুটিও বসানো হয়নি। মাত্র কিছুদিন পূর্বে বিদ্যুতের খুটি বসানোর জন্য যে সার্ভে করা হয় তা করা হয়েছে। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ আসবে গ্রামবাসীর কেউ তা জানে না। তেমনি রামাপাড়া গ্রামের একটু সচেতন পরিবার নিবারণ দাস, তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচেনের সময় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ সবাই এসে কথা দিয়েছিলেন জুন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কথা রাখেনি। আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা শুধু এমপি চেয়ারম্যানদের কথায় ২৭ বছর ধরে শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবায়ন দেখছি না। স্থানীয় সংসদ সদস্য বার বার প্রতিশ্র“তি দিলেও সেই প্রতিশ্র“তি রাখেনি। অবশ্য উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমি বিদ্যুৎ দিয়েই যাচ্ছি। এইত গত ২৪ ডিসেম্বর উপজেলার ১০টি গ্রামে ২শ ৮৬টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলো। রামাপাড়াও হবে। একটু ধর্য্য ধরতে হবে। আগামী ২০১৮ সালের মে মাসের মধ্যে নিয়ামতপুর উপজেলার একটি পরিবারও বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না। কিন্তু নেহেন্দা রামাপাড়ার অবহেলিত পরিবারের কথা, আর কত দিন আমাদের অপেক্ষ করতে হবে? আমরা উপজেলা সদর থেকে এত কাছে বসবাস করছি তবুও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। গ্রামের আরেক জন অরুন কুমার দাস, তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের ছেলে মেয়েরা রাতে ভালভাবে পড়াশুনা করতে পারছে না। মোবাইল চার্জ দিতে ২ কিলোমিটার দুরে উপজেলা সদরে অথবা নিয়ামতপুর গ্রামে গিয়ে ধর্না দিয়ে বসে থাকতে হয়। নিরুপায় হয়ে শত কষ্টের মাঝেও এনজিওদের চড়া দামে কিস্তিতে সোলার বিদ্যুৎ নিতে হয়েছে। আমরা অবিলম্বে গ্রামে বিদ্যুৎ চাই। উপজেলার বিভিন্ন নতুন নতুন গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগ হলেও নেহেন্দা (রামাপাড়া) একটি ঐতিহ্যবাহী পুরাতন গ্রাম হলেও দীর্ঘ ২৭ বছর যাবত বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত।