হঠাৎকরে আবার দেশব্যপি তথাকথিত জঙ্গিরা মাথাচাঁরা দিয়ে উঠছে। এমনকি আইশৃংখলাবাহিনীদের উপর হামলায় আরো ভাবিয়ে তুলেছে। ইদানিং রাজধানীর আশকোয় র্যাব ব্যারাকে, খিলগাঁও এলাকায় র্যাবের তল্লাশি চৌকিতে, বিমানবন্দর এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে জঙ্গিদের ছোঁরা বোমা হমলায় নতুনকরে আরো ভাবিয়ে তুলেছে যে, এই জঙ্গিদের শেষ কোথায়। দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে সয়ংসম্পূর্নর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি বিশেষ কায়দায় পিছিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে একটি গুষ্ঠি। সবশেষে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহল নামের একটি বাড়িতে চলছে জঙ্গিদের তৎপরতা।
সিলেট শহরের যে বাড়িতে জঙ্গিদের ধরতে সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে, সেই বাড়িটি বিস্ফোরক পেতে ভরে রাখা হয়েছে বলে আশংকার করছেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ দফতরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রাশিদুল হাসান জানিয়েছেন, এ কারণেই এই অভিযান শেষ হতে এত বেশি সময় লাগছে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার পাঁচতলা ভবনটি দুদিন ধরে ঘিরে রাখার পর শনিবার সকালে সেখানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান শুরু হয়। প্যারা-কমান্ডোদের একটি দল সকাল সাতটার দিকে ‘আতিয়া মহল’ নামে ওই পাঁচতলা ভবনটিতে সশস্ত্র অভিযান চালায়।
লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রাশিদুল হাসান জানান, পাঁচ তলা ভবনটি থেকে তারা এ পর্যন্ত ৭৮ জন মানুষকে নিরাপদে বের করে এনেছেন। এখন ভেতরে জঙ্গি ছাড়া আর কেউ নেই বলে তাঁরা ধারণা করছেন।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের সংখ্যা ৫-৬ জন হবে বলে তারা অনুমান করছেন। তাদের আত্মসমর্পনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে ভেতরে তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
এই বিস্ফোরণের শব্দ বাইরে থেকেও শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদকিরা। সেনাবাহিনীর এই অভিযানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’।
জানা যাচ্ছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করে কয়েকশ পুলিশ।
এলাকাটি সিলেট শহরের ভেতরেই। জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে এই শিববাড়ির অবস্থান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যের দিকে তাদের অভিযান ঘনীভূত হয় দুটি বাড়িকে ঘিরে। দুটি বাড়ির মালিক একই ব্যক্তি। তিনি অবশ্য আরো দূরের অন্য একটি বাড়িতে থাকেন।
তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভাড়াটিয়াদের জাতীয় পরিচয়পত্র বিশ্লেষণ করে পুলিশ ধারণা করে ‘আতিয়া মহল’ নামের পাঁচ তলা বাড়িটিতে মর্জিনা নামে এক মহিলার ভাড়া নেয়া ফ্ল্যাটটিই সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা। জাতীয় পরিচয়পত্রে মর্জিনার স্বামীর নাম মুসা বলে উল্লেখ আছে।
বৃহস্পতিবার সারা রাত এবং শুক্রবার সারা দিন ও রাত বাড়িটিকে ঘেরাও করে রাখলেও ভেতরে কোন অভিযান চালায়নি পুলিশ।
অবশেষে শনিবার সকাল থেকে বাড়িটিতে অভিযান শুরু করল সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসের প্যারা-কমান্ডো দল।
জঙ্গিদের ফাঁদ পাতা বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬ আইএসের দায় স্বীকার
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানস্থলের বাইরে পরপর দুটি বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।
জানা যায়, নিহতের মধ্যে রয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর আবু কায়সার দিপু, জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফাহিম, মদনমোহন কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী ওয়াহিদুল ইসলাম অপু (২৬) এবং নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ি শহীদুল ইসলাম (২৮)। নিহত অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক, পুলিশ, র্যাব সদস্যসহ ৫০ জন আহত আছেন। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। তবে নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে জঙ্গিবিরোধী ওই অভিযানের মধ্যে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এই গোষ্ঠীর কথিত বার্তা সংস্থা ‘আমাক’ এই খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে অনলাইনে জঙ্গিদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্র“প।
জঙ্গি আস্তানার পাশে বোমা হামলার বিষয়ে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহল থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোটাটিকর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে প্রথম হামলার ঘটনাটি ঘটে। এর কয়েক মিনিট পর পাঠানতলা মসজিদের কাছে আরেকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
আজ আবারো দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে দুপুর ১২টায় শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। রোববার তৃতীয় দিনের মতো জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলাকালে এমন বিস্ফোরণ ঘটল।
ঘটনাস্থল থেকে জানা যায়, আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বিকট শব্দে একটি বিস্ফোরণ হয়। এর আগে সকালেও আরও দুটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে বেশ খানিকটা দূরে সাংবাদিকরা অবস্থান করায় বিস্তারিত কিছু এখনো জানা যায় নি।
সেনাবাহিনীর প্যারা কামান্ডো ইউনিট শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই এই অভিযানে অংশ নিয়েছে। শনিবার সকালে অপারেশনের নাম দেয়া হয় ‘টোয়াইলাইট’।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, আহত ব্যক্তিদেরকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরায় চালানো অভিযানেও অংশ নিয়েছিল সিলেটের জালালাবাদ থেকে যাওয়া সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল।
পুলিশের ধারণা, আতিয়া মহল নামের বাড়িটির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা অবস্থান করছে। ভেতরে একজন নারী থাকার কথা নিশ্চিত হলেও মোট কতজন আছেন, সেটা জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, ভেতরে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাইনুল ওরফে মুসা রয়েছেন।