বর্তমানে অনেকে দম্পতিই ক্যারিয়ার গঠন বা জীবনের অন্যান্য দিক গুছিয়ে নেবার উদ্দেশ্যে সন্তান নিতে অনেক দেরি করছেন। কিন্তু বেশি দেরি করে ফেললে আবার বয়সের কারণে সন্তান ধারণক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়।
যেসব কারণে অনেক দম্পতিই দেরীতে সন্তান নিতে চান
১. দেরীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
২. অনেকে দম্পতি খুব ক্যারিয়ার সচেতন।
৩. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব।
৪. আর্থিক অসংগতি, ইত্যাদি।
কিন্তু দেরিতে সন্তান নিতে গেলে ডিম্বাণুর কার্যকারিতা নষ্ট নওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। ফলে সন্তান ধারনে সমস্যা দেখা দেয়।অনেক সময় সন্তান গর্ভে ধারণ করলেও নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সন্তান গর্ভধারনের উপযুক্ত বয়স
সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স নারীদের সন্তান ধারণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ, এর পর থেকে প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে থাকে এবং গর্ভকালীন নানা রকম জটিলতার হারও বেড়ে যায়। মেয়েদের বয়স ৩০ পার হওয়ার আগেই অন্তত প্রথম সন্তান ধারণ করা মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই নিরাপদ, তবে কোনোভাবেই বিশের আগে নয়।
বয়স বাড়লে যেসব কারনে গর্ভধারণের সমস্যা দেখা দেয়
১. একটি মেয়ে জন্মের সময়ই কিছুসংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিঃশেষ হতে থাকে। ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং গুণগত মান কমতে থাকে। এতে এ সময় গর্ভধারণ করার চেষ্টার পরও দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে পারে।
২. একজন পূর্ণাঙ্গ রমণীর ডিম্বাশয় থেকে প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু নির্গত হয়। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রজনন বয়স ধরা হলেও ৩৫ বছরের পর থেকে প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে।বয়স্ক মহিলাদের ওভুলেশনের (ডিম্বস্ফোটন) সমস্যা হয়।কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে কার্যকরী ডিম্বাণুর সংখ্যা কমে যায়।
৩. বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিপক্ক ডিম্বানুর সংখ্যা কমে যায়।ফলে শুক্রানুর সাথে নিষিক্ত হওয়ার জন্য যে পরিপক্ক ডিম্বানুর প্রয়োজন তা অনেকাংশে পাওয়া সম্ভব হয় না।
৪. বয়স্ক মহিলাদের মহিলাদের সার্ভিক্যাল মিউকাসে সমস্যা দেখা দেয়।বয়স বাড়লে জরায়ু মুখে যে সারভাইকেল ফ্লুইড থাকে তার এসিডের মাত্রা বা পি.এইচ লেভেল কমতে থাকে।
৫. অনেকের ক্ষেত্রে ৪০এর আগেই মেনোপজ অর্থাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। ওভুলেটিং বন্ধ হয়ে যায় ৪০ বছর বয়সে।
৬. পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম্বের পরিমাণ কমে যায়, ওভুলেশন অনিয়মিত হয়ে যায়।
৭. বয়সের কারনে নানারকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে যার কারণে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।যেমনঃ ফেলোপিয়ান টিউব ব্লক হতে পারে নানা ইনফেকশনের কারণে।
৮. বয়সের কারণে অনেক মহিলারই ওজন বৃদ্ধি পায়। শারীরিক স্থুলতাও গর্ভধারনে বাধা সৃষ্টি করে।
৯. বয়সের কারণে মহিলাদের নানারকম স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, জরায়ুর সমস্যা, ইত্যাদি দেখা যা নারীর উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দেয়।
১০. বয়সের কারণে মহিলাদের ডিম্ব কোষের ক্রোমোজোনালে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় যা উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে বা কমিয়ে দেয়। অনেক সময় এ সমস্যার কারণে অনেক বয়স্ক মহিলাদের বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম নেয়।
১১. বেশি বয়সে সন্তান গর্ভে ধারণ করলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন উচ্চ-রক্তচাপ, হরমোনগত সমস্যা কিংবা বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
আপনি কি নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিয়ে তারপর সন্তান নেয়ার কথা ভাবছেন? বেশি বয়সে সন্তান নেয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে আপনি কি অবগত? শুধু ক্যারিয়ার নিয়ে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা মোটেই শুভবুদ্ধির পরিচয় নয়। অন্যদিকে ৩০ বছর বয়সের পরে নারীদের জন্য যেমন সন্তান নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় ঠিক তেমনি ৪৫ বছর পরে পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে বলে তাদের জন্যও তা ঝুঁকিপূর্ণ।