ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ পরিচিতিকরণ এবং সংযোগ সমন্বয়কারী গবেষণা ও উপদেষ্টা সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) মনে করে করোনার এই মহামারীর পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতিকে পুনরূদ্ধার, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং টেকসই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতকরণ করতে একটি বহুমুখী, বাস্তবায়নযোগ্য এবং দিক নির্দেশনামূলক সম্প্রসারণশীল বাজেটের বিকল্প নেই। এ প্রেক্ষাপটে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে যেখানে প্রত্যাশিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮.২% এবং মুদ্রাস্ফীতি হার ৫.৪%।
১৬ জুন মঙ্গলবার আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপলক্ষে আইবিএফবি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন রশিদ। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য চ্যালেঞ্জিং বাজেট দিতে গিয়ে নতুন অনেক চ্যালেঞ্জই আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, যা আমরা দেখছি। করোনা মহামারীর কথা বারবার এই বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিক খাতগুলোতে যে পরিমাণ বরাদ্দ ঘোষণা দিয়েছেন, তা এই চ্যালেঞ্জিং সময়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণই বলতে হবে। তবে আমরা আশাবাদী বাজেটের দর্শনে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং মানুষ ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য যে প্রতিজ্ঞাগুলো করা হয়েছে, সেগুলো ঠিকভাবে পালন করা হবে।
বক্তারা বলেন, করোনা মহামারি চললেও প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের অদক্ষতা রয়েছে। ফলে প্রতিবছরই উন্নয়ন ব্যয় যথাযথ হয় না। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।
তাঁরা আরো বলেন, করোনার এই দুর্যোগে স্থানীয় ও প্রবাসী কর্মসংস্থানে বড় ধাক্কা এসেছে। অথচ তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনা নেই বাজেটে।
বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতার প্রবণতা বেসরকারি খাতকে চাপে ফেলছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, ব্যাংকের ওপর সরকারের অতিমাত্রায় নির্ভরতার কারণে বিনিয়োগ কমবে, শিল্পে চাপ বাড়বে এবং কর্মসংস্থানে বড় আঘাত আসবে। ফলে কভিডের কারণে কর্মচ্যুত হওয়া কর্মী এবং প্রতিবছর নতুন করে চাকরির বাজারে আসা ২০ লাখ নতুন কর্মীর কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হবে।
বাজেট বক্তব্যে আইবিএফবির সভাপতি বলেন, দেশের মোটরসাইকেল সংযোজন এবং উৎপাদন শিল্প হাঁটি হাঁটি পা পা করে দাঁড়ানো শুরু করেছে। এই শিল্পের কারণে পাঠাও ও উবারে কাজ করে তরুণরা নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে। সামনে যেখানে কর্মসংস্থানে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে যাচ্ছে; সেখানে মোটরসাইকেলের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপ করে তরুণদের কর্মসংস্থানে বাধা তৈরি করা হয়েছে। তিনি সরকারের কাছে মোটরসাইকেল শিল্পে আরো এক বছরের জন্য মূসক প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
হুমায়ুন রশিদ আরো বলেন, দেশের বস্ত্র খাত কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আয়ে বিশাল ভূমিকা রাখে। এই খাত সম্প্রতি করোনার কারণে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। তাই আইবিএফবির প্রস্তাব, এই খাতে রপ্তানি বাজারের প্রণোদনা ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। এ ছাড়া অর্থবছরের সময় জুলাই থেকে জুন বাদ দিয়ে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর অথবা এপ্রিল থেকে মার্চ করার প্রস্তাব করেন তিনি ভার্চুয়াল এ আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন আইবিএফবির সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকি, সহসভাপতি (অর্থ) লুত্ফুননিছা সৌদিয়া খান, সদ্য সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, আইবিএফবির পরিচালক ড. মো. মুজিবুর রহমান, টিএমএসএসের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম, আইবিএফবির পরিচালক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন প্রমুখ।